Tuesday , 30 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য এক  উদ্যোগ
--সংগৃহীত ছবি

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য এক উদ্যোগ

অনলাইন ডেস্ক:

ঘরটি দৈর্ঘ্যে ১০ হাতের মতো। প্রস্থে সাড়ে চার হাত। এক রুমের ঘরের পূর্ব পাশে একটি খাট ঘরের প্রস্থ দখল করে আছে। পাশে পূজার আয়োজন। পাশে কাপড় ও থালাবাসন রাখার একটি শোকেস। এর পাশেই রান্নার চুলা, পানির কলস। বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজাপুর গ্রামের এই ঘিঞ্জি ঘরেই মা-বাবার সঙ্গে বাস চন্দ্রিকা রানীর। মাথা নিচু করে চন্দ্রিকাদের কুঁড়েঘরে ঢুকতে হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী চন্দ্রিকা তার দুই বন্ধুকে নিয়ে চৌকির ওপর বসে খেলছিল। আগামীকাল শনিবার তারা এই ঘিঞ্জি ঘর ছেড়ে সরকারের দেওয়া নতুন রঙিন টিনের পাকা ঘরে উঠবে। তা দেখাতে বন্ধুদের নিয়ে এসেছে চন্দ্রিকা, যেন তার আনন্দ আর বাধ মানছে না।

চন্দ্রিকার এই আনন্দের উৎস মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনন্য এক উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সারা দেশের ভূমিহীন ও ঘরহীন প্রায় ৯ লাখ মানুষকে ঘর উপহার দিচ্ছে সরকার; এর একটি ঘরই পাচ্ছে চন্দ্রিকার পরিবার। উপকারভোগীদের মধ্যে যাদের জমি আছে তাদের শুধু ঘর দেওয়া হচ্ছে। আর যাদের জমিও নেই তাদের ২ শতাংশ জমি দিয়ে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। দুই কক্ষবিশিষ্ট প্রতিটি আধাপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় এক লাখ ৭১ হাজার টাকা। সব বাড়ি সরকারের নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে। রান্নাঘর, সংযুক্ত টয়লেটসহ অন্যান্য সুবিধা থাকছে এসব ঘরে।

চন্দ্রিকার কাছে প্রশ্ন- ঘর দিচ্ছে কে? —সরকার। সরকার কে?—সরকার ঢাকায়। সরকারের নাম কী?—জানি না। তোমাদের ঘরের সামনে তো সাইনবোর্ডে লেখা আছে, তুমি পড়োনি?—হ্যাঁ হ্যাঁ পড়ছি, হাসিনা, শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলতে বলতে খুশির ঝিলিক বয়ে যাচ্ছিল চন্দ্রিকার চেহারায়। তারই প্রতিবিম্ব অপর্ণা রানী ও মিঠুন কুমার বিশ্বাস দম্পতির চোখে-মুখে। তিনজনের এই পরিবার চলে মিঠুন কুমারের দিনমজুরির টাকায়। জীবনে কোনো দিন পাকা ঘর, তা-ও আবার দামি রঙিন টিনের ঘর পাবেন তা ভাবতেও পারেননি।

যাদের পাকা ঘর দেওয়া হবে, তার মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ঘর কাল শনিবার উপকারভোগীদের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেওয়ার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঢাকার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সারা দেশে একযোগে এসব ঘর হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী চারটি জেলা হবিগঞ্জ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, খুলনা ও নীলফামারীতে সরাসরি কথা বলবেন।

ঢাকা থেকে বাগেরহাটে আসার পথে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ২০টি প্রস্তুত থাকা ঘরের উপকারভোগীদের একজন ৬২ বছর বয়সী সন্ধ্যা রানী। তাঁর জন্য নির্ধারিত ২০ নম্বর ঘরটিতে গিয়ে সুইচবোর্ড টিপতেই আলো জ্বলে ওঠে। সেই আলোতে ঘরের মধ্যে হালকা অন্ধকারে থাকা সন্ধ্যা রানীর ছলছল করা চোখে পড়ে চোখ। আরে আপনার চোখে পানি কেন?—আনন্দে বাবা। কিসের আনন্দ?—জীবনে এ রকম ঘরে থাকুম, চিন্তাও করিনি। ঘর কিভাবে পেলেন?—শেখ হাসিনা দিছে। উনি আপনাকে চিনে না, ঘর দিল কেমনে?—হের লোকেরাই বলছে, এই ঘর হে (শেখ হাসিনা) আমাগোর দিতে বলছে।

সন্ধ্যা রানী বলেন, ‘আমি ভিক্ষা-টিক্ষা কইরা খাই। ৩৫ বছর আগে জামাই মারা গেছে। একটা ঘরের অভাবে পোলা মাইয়াগো লইয়া থাকতে পারি না। ওহন আমি বড় ঘর পাইছি। হগলরে লইয়া থাকমু। ভগবান  হাসিনারে বালা রাহুক।’

পাশের ১৭ নম্বর ঘর পেয়েছেন আছিয়া আক্তার। বয়সের ভারে প্রায় তিনমাথা অবস্থার আছিয়া বলেন, ‘শেখের বেটি বাফের (বাবার) মতোই। হের বাফেও মানুষের লাইগ্যা করত, এহন তার মাইয়াও (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) করতাছে। আল্লাহ তার বালা করুক। আমি নামাজ পইড়া তার লাইগ্যা দোয়া করি।’

দরিদ্রদের মধ্যে এসব ঘর তৈরি করে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীন আশ্রয়ণ প্রকল্প, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ কয়েকটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ জড়িত। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে মোট আট লাখ ৮২ হাজার ঘরহীন ও ভূমিহীন মানুষকে ঘর দেওয়ার বিশাল উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পৃথিবার ইতিহাসে একসঙ্গে এত মানুষকে ঘর দেওয়ার রেকর্ড নেই। শনিবার একসঙ্গে প্রায় ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর হচ্ছে—এটা সারা বিশ্বে একটি রেকর্ড। এক দিনে এত ঘর কোনো সরকার তার দেশের দরিদ্রদের জন্য দেয়নি।

প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী যতই ব্যস্ত থাকেন না কেন, দুঃখী মানুষের জন্য তাঁর হৃদয়ে জায়গা আছে। তাই এটা প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহের কারণে সম্ভব হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই উদ্যোগ চলতে থাকবে।

৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশের ভূমিহীন, গৃহহীন ছিন্নমূল অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র জানায়, ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু তৎকালীন নোয়াখালী জেলার (বর্তমানে লক্ষ্মীপুর জেলা) চরপোড়াগাছা গ্রাম পরিদর্শনে যান এবং ভূমিহীন অসহায় মানুষের পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন। জাতির পিতার সেই উদ্যোগের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা।

১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার ও সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে। পরদিন ২০ মে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সেন্ট মার্টিন পরিদর্শন করেন এবং ঘূর্ণিঝড়ে গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারের পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী স্থানীয় একজন আওয়ামী লীগ নেতার দানকৃত জমিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড়কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের কার্যক্রম শুরু করেন। ঐতিহাসিক সেই উদ্যোগ এবার সারা দেশের গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য বড় আকারে নেওয়া হয়েছে, যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে নতুন সংযোজন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে পরিচালিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন বলেন, শনিবার প্রথম দফায় প্রায় ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তরের পর আগামী মাসে আরো প্রায় এক লাখ ঘর উপকারভোগীদের কাছে হস্তান্তর করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর দূরদৃষ্টিসম্পন্ন এই উদ্যোগ বিশ্ব ইতিহাসে বাংলাদেশকে নতুনভাবে চেনাবে।

শরণখোলা উপজেলা চেয়ারম্যান রায়াহান উদ্দিন শান্ত বলেন, সিডর, আইলা, বুলবুল, আম্ফানের মতো দুর্যোগগুলো দেশের প্রথমেই আঘাত হানে শরণখোলায়। এই এলাকার মানুষ ঘর তৈরি দেখে আনন্দে আত্মহারা। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর মতোই দুঃখী মানুষের ব্যথা বুঝেন। আমরা তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ।’

উপজেলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সরদার মোস্তফা শাহিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই উদ্যোগ দরিদ্র মানুষের স্বপ্ন সত্যে পরিণত করছে।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply