Wednesday , 1 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ-প্রধানমন্ত্রী
--সংগৃহীত ছবি

শিক্ষার মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে এগিয়ে যাবে ছাত্রলীগ-প্রধানমন্ত্রী

অনলাইন ডেস্ক:

শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের প্রতিটি নেতাকর্মীকে সংগঠনের মূলমন্ত্রের আলোকে আদর্শবান নাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা ছাড়া একটা জাতি এগোতে পারে না, সেই কথাটা মাথায় রেখে ছাত্রলীগকে চলতে হবে।’

ছাত্রলীগের মূলমন্ত্র ‘শিক্ষা, শান্তি ও প্রগতির’ উদ্ধৃতি তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে শান্তির পথ ধরে প্রগতির পথে আমরা এগিয়ে চলব। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আদর্শ নিয়ে না চললে কখনো বড় হতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতে পারবে না। মানুষকে কিছু দিতে পারবে না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সোমবার বিকেলে রাজধানীর ফার্মগেটের কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে সংগঠন জাতির পিতা গড়ে তুলেছিলেন মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের জন্য, যে সংগঠন এ দেশের স্বাধীনতাসংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখে গেছে, যে সংগঠন এ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে যাওয়ায় সংগ্রামী ভূমিকা নিচ্ছে—সে সংগঠনের নামই বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। এই ছাত্রলীগ এগিয়ে যাবে, সেটাই আমার কামনা।’

তিনি বলেন, ‘নিজের ঐতিহ্য মাথায় রেখে, জাতির পিতার আদর্শ বুকে ধারণ করে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে তোমরা নিজেদেরকে গড়ে তুলবে।’ যেকোনো রাজনীতিবিদের জন্য আদর্শ নিয়ে চলাটাই সব থেকে বড় কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সততা এবং আদর্শের পাশাপাশি লক্ষ্য স্থির থাকলে পরে যেকোনো অর্জনই সম্ভব। আর এটা জাতির পিতা দেখিয়ে গিয়েছেন।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বদরবারে বাঙালি জাতি মাথা উঁচু করে চলবে—সেটাই আমাদের আজকের দিনে প্রতিজ্ঞা।’

ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে স্মৃতিচারণামূলক বক্তব্য রাখেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ও ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এ ছাড়া ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরে ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ভার্চুয়াল ব্লাড ব্যাংক এবং স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতারসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আলোচনাসভাটি সরাসরি সম্প্রচার করে। এ ছাড়া দেশের সব জেলা, মহানগর ও উপজেলার দলীয় কার্যালয়ে প্রজেক্টর ও সাউন্ড সিস্টেমের মাধ্যমে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সম্প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে জাতির পিতার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’, ‘আমার দেখা নয়াচীন’ এবং ‘সিক্রেট ডকুমেন্ট অব ইন্টেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’-এর বিভিন্ন খণ্ড পড়ে দেখার আহ্বান জানান।

সে সময়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ডিক্লাসিফাইড রিপোর্ট শেখ রেহানার সহযোগিতায় খুঁজে বের করার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সময়মতো সেগুলোও প্রকাশ করা হবে।’

তিনি বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশে নয়, পৃথিবীর ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের যে অবদান, তা এসব রিপোর্ট থেকেই বের হয়ে আসে।’ জাতির পিতার ত্যাগ ও দেশাত্মবোধ থেকে শিক্ষা গ্রহণের পাশপাশি দেশের প্রকৃত ইতিহাস অন্বেষণের জন্য ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতি তিনি গুরুত্বারোপ করেন। দেশের বর্তমান সাক্ষরতার হার ৭৪ শতাংশ উল্লেখ করে এটি আরো বৃদ্ধিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে স্কুল-কলেজ বন্ধ রয়েছে এবং স্কুল চালুর উদ্যোগ নেওয়ার সময় করোনার সেকেন্ড ওয়েভ চলে আসার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সংসদ টিভির মাধ্যমে টেরেস্ট্রিয়াল ব্যবহার করে এবং অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করেন।

তাঁর সরকার করোনার মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিবারের মতো এবারও প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৪ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করেছে এবং প্রায় দুই কোটি বৃত্তি ও উপবৃত্তির টাকা বিতরণ অব্যাহত রেখেছে বলেও সরকারপ্রধান জানান। শেখ হাসিনা এ সময় পাঠ্যপুস্তকের বাইরের বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের এই সময়কে কাজে লাগানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘আমাদের ছাত্রদেরকে আমি বলব—বসে না থেকে যা পাও, নিজেরা কিছু পড়াশোনা কর। এখানে একটা সুযোগ, তাই পাঠ্যপুস্তক তো পড়বেই; অন্যান্য বইও পড়তে হবে। কারণ জ্ঞান যত বেশি অর্জন করতে পার, ততই নিজেকে আরো সম্পদশালী মনে করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ধন-সম্পত্তি থাকে না। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ, যা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না। আর এই সম্পদ থাকলে জীবনে কোনো দিন হোঁচট খাবে না—আমাদের ছেলে-মেয়েদেরকে সে শিক্ষাই আমরা দিয়েছি।’ ‘কাজেই তোমরা সেভাবেই শিক্ষা নেবে এবং ছাত্রলীগেরও সেটাই কাজ থাকবে, নিজেরা পড়বে এবং অন্যকেও পড়াও’, বলেন তিনি। নিজ গ্রামের নিরক্ষরকে অক্ষরজ্ঞান প্রদানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি তাঁর আহ্বানের পুনরুল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে গ্রামের স্কুল, আত্মীয়-স্বজন এবং পাড়া-প্রতিবেশীকে পারলে পড়াশোনায় সহযোগিতা করো।’ প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মেনে চলার এবং করোনা নামক সংক্রামক ব্যাধি থেকে নিরাপদ থাকার জন্য সবার মাস্ক ব্যবহারের প্রতি তাঁর আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন।

সূত্র : বাসস।

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply