Monday , 29 April 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
এই অভিযান আরো আগে কেন হলো না
--ফাইল ছবি

এই অভিযান আরো আগে কেন হলো না

অনলাইন ডেস্কঃ

গত ৪ মার্চ থেকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) ভ্রাম্যমাণ আদালত রাজধানীতে অভিযান শুরু করেছে। রাজউকের নকশার ব্যত্যয় ঘটিয়ে স্থাপনা তৈরি করায় তা গুঁড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্দেশে ছাদে থাকা একটি রেস্তোরাঁও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই অভিযানের মধ্য দিয়ে অনেককেই আটক করে বিচারের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।

অভিযান চলাকালে সিঁড়ি আটকে রাখা, রাজউকের অনুমতি না থাকাসহ বেশ কিছু অনিয়ম লক্ষ করা যায়। এ জন্য টুইন পিক ভবনে থাকা ১৪টি রেস্তোরাঁ বন্ধ করে দেওয়া হয়। রেস্তোরাঁ মালিকদের অনেকেরই দাবি যে তাঁরা অনুমতি নিয়েই ব্যবসা পরিচালনা করছেন, যদিও রাজউকের মতে কমার্শিয়াল ভবনে রেস্তোরাঁ থাকতে পারে না। তাহলে এত দিন রাজউকের মতো অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠানের ভ্রাম্যমাণ আদালত কেন অভিযান পরিচালনা করেননি? সারা দেশে এমন অসংখ্য রেস্তোরাঁ এবং অননুমোদিত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে—সব কটিই কি অভিযানের আওতায় আসবে?

এই লেখা তৈরি করা পর্যন্ত রাজধানীতে দুটি ভবনে অভিযান চালায় রাজউক ও সিটি করপোরেশন।

এই অভিযান আরো আগে কেন হলো নাআগের অগ্নিকাণ্ডগুলোর পর যেসব প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার তাগিদ অনুভূত হয়েছিল, সেগুলো যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে বেইলি রোডের মতো ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব ছিল। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে আমরা ভুল থেকে শিখতে পারি না।

অতীত থেকে সাম্প্রতিককাল পর্যন্ত রাজধানীতে যেসব ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, সেসব নিয়ে তদন্তের পর কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যথাযথ এবং কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে উদাসীনতা সাধারণ মানুষের সচেতনতার স্তরকেও ভোঁতা কিংবা উদাসীন করে দিয়েছে। এ কথা সত্য যে রাজধানীবাসীর জন্য প্রতিটি মুহূর্ত এখন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঢাকায় কেমিক্যাল গোডাউন এখনো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযান পরিচালনা করা হলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা নানাভাবে এ ধরনের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। কিন্তু কিভাবে এবং কোন শক্তির মাধ্যমে তাঁরা এসব অন্যায় কার্যক্রম সহজেই করে যাচ্ছেন, সেটি যথাযথ তদারকির আওতায় আনার অনিবার্যতা তৈরি হয়েছে।

যেকোনো ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে যেমন বিল্ডিং কোড যথাযথভাবে অনুসরণ করা উচিত, ঠিক তেমনিভাবে কোন ভবনে কী ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থাকবে, সে বিষয়েও একটি সুনির্দিষ্ট নীতিমালা থাকা উচিত। এর আগে আমরা লক্ষ করেছি, অগ্নিকাণ্ডের পর তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আগুন লাগার কারণসহ বিভিন্ন বিষয় উঠে আসে। সেসব প্রতিবেদনের বেশির ভাগেই অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কারণ হিসেবে বৈদ্যুতিক গোলযোগ, শর্ট সার্কিট, ইলেকট্রিক চুলা, গ্যাস ও মাটির চুলা, বিড়ি-সিগারেটের জ্বলন্ত টুকরা প্রভৃতি অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাতের কারণ।

এ ছাড়া ঢাকা শহরে অসংখ্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং অপরিকল্পিত ভবনের কারণেও ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের আশঙ্কা রয়েছে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ এবং অপরিকল্পিত ভবনের সমাপ্তি কেন টানা সম্ভব হচ্ছে না? ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ভবনগুলো যারা ব্যবহার করছে এবং অপরিকল্পিত ভবন তৈরিতে যারা জড়িত রয়েছে, তারা এসব ভয়াবহ দুর্ঘটনার দায় এড়াতে পারে না। আমি মনে করি, এসব ক্ষেত্রে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিত। কোনো শক্তির কাছেই সরকারের মাথা নত করা উচিত নয়।

বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান স্লোগান হলো দেশের উন্নয়ন। নিরাপত্তা এবং উন্নয়ন একই সূত্রে গাঁথা। জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমেই উন্নয়ন সার্থকতা পায়। কিন্তু যেখানে মানুষের জীবনের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই বা সংকট আছে, সেখানে উন্নয়নের বিষয়টি আপেক্ষিক হয়ে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। প্রতিনিয়ত ঢাকা শহরকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে টিকিয়ে রাখতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সব ধরনের কলকারখানা সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিচ্ছেন নগর পরিকল্পনাবিদরা। প্রশাসন যেখানে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা কেমিক্যাল গোডাউন নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, সেখানে কারখানা ও শ্রমঘন শিল্প স্থানান্তর করবে কিভাবে?

আগের অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসবের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বেশ কিছু দিকনির্দেশনা দেন। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল পরিকল্পিতভাবে কেমিক্যাল শিল্প জোন গড়ে তুলে পুরান ঢাকার সব কেমিক্যাল গোডাউন সরিয়ে নেওয়া, নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলাসহ ভবন নির্মাণ এবং মার্কেট ব্যবস্থাপনা। প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারি এবং সচেতন করতে বক্তব্য ও নির্দেশনা দিয়েছেন। পরিতাপের বিষয় হলো, বিগত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া সেসব নির্দেশনার প্রায় কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি, মেয়রের অঙ্গীকার এবং প্রশাসনের তৎপরতা থাকা সত্ত্বেও কেন রাজধানীতে অগ্নিকাণ্ডের ভয়াবহতার আশঙ্কা থেকে বের হওয়া যাচ্ছে না—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করা কঠিন হলেও অসম্ভব না।

আমরা সর্বস্তরের মানুষ যদি সচেতন হই, তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব। যেকোনোভাবেই আমাদের অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া অতীব জরুরি। সর্বোপরি আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং অন্যকেও সচেতন করতে হবে।

লেখক : অধ্যাপক, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply