Saturday , 4 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
ড. ইউনূসের মামলা প্রসঙ্গে যা বললেন মার্কিন মুখপাত্র
--সংগৃহীত ছবি

ড. ইউনূসের মামলা প্রসঙ্গে যা বললেন মার্কিন মুখপাত্র

অনলাইন ডেস্কঃ

বাংলাদেশে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর আপিল চলার সময় একটি স্বচ্ছ ও ন্যায়সম্মত আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ নিশ্চিত করার ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর। দুদকের একটি মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দেওয়া ও তার বিরুদ্ধে করা শ্রম আইনে চলমান মামলাগুলোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়ে ভয়েস অফ আমেরিকা বাংলার পাঠানো এক ইমেইলের জবাবে, শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র এ আহবান জানান।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, “আমরা (যুক্তরাষ্ট্র) লক্ষ্য করেছি, শ্রম আইনের অধীনে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা অস্বাভাবিক দ্রুততার সাথে পরিচালিত হয়েছে।”

বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর অভিযোগপত্র জমা দেয়া সম্পর্কে মুখপাত্র বলেন, তারা লক্ষ্য করেছেন, “দুর্নীতি দমন কমিশন অতিরিক্ত মামলাগুলির জন্য একটি চার্জশিট অনুমোদন করেছে যা বিশ্বজুড়ে ব্যাপকভাবে নিন্দিত হচ্ছে।

মুখপাত্র তার প্রতিক্রিয়ায় আরো বলেন, “শ্রম ও দুর্নীতিবিরোধী আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে বলে যে ধারণা সৃষ্টি হচ্ছে তা বাংলাদেশে আইনের শাসন জারি থাকার ব্যাপারে প্রশ্ন জাগাতে ও ভবিষ্যৎ বৈদেশিক বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করতে পারে বলে বাংলাদেশের এক গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে আমরা উদ্বিগ্ন।”

আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না বলে জানিয়েছেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার (১ ফেব্রুয়ারি) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, “অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে- তাঁর (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরও বলা হচ্ছে আমরা তাঁকে হয়রানির জন্য এটা করছি।”

মামলা এবং আপিল

বাংলাদেশের একটি শ্রম আদালতের দেওয়া ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে, রবিবার (২৮ জানুয়ারি) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিস্তারিত শুনানির জন্য আদালত আপিল গ্রহণ করে এবং আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিন মঞ্জুর করেছে আদালত। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত, তাদের জামিন দিয়েছে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।

এর আগে এ বছরের ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার একটি আদালত। আরেকটি ধারায়, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিল কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর। দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে কারাগারে যেতে হয়নি ড. ইউনূসকে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেছিলেন, “যে অপরাধ করিনি, সেই অপরাধের জন্য শাস্তি পেলাম।”

এই মামলা ছাড়াও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে, দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলাও রয়েছে। এই মামলাকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবীরা।

বিশ্ব নেতাদের সর্বশেষ খোলা চিঠি

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা ও রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ১২৫ জন নোবেল বিজয়ীসহ ২৪২ জন বিশ্বনেতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। সোমবার (২৯ জানুয়ারি) ওয়াশিংটন পোস্টে এই বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিরা ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার পর্যালোচনার জন্য বাংলাদেশে একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দেন।

ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা ঘিরে এ নিয়ে তৃতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রীকে খোলা চিঠি পাঠালেন বিশ্বের নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তিরা। শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূস ও গ্রামীণ টেলিকমের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ১ জানুয়ারি আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এই চিঠি লেখা হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, ড. ইউনূসকে হয়রানি নিয়ে দ্বিতীয় দফার খোলা চিঠিতে ১০৮ নোবেলজয়ীসহ বিশ্বের ১৯০ জনের বেশি নেতৃত্বস্থানীয় ব্যক্তি স্বাক্ষর করেছিলেন। এরপর ২০২৩ সালের অগাস্টে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের প্রতি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে আইনজীবী ও বিশেষজ্ঞ পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিলেন।

তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, “যার বিরুদ্ধে মামলা, তার সব দলিল-দস্তাবেজ তারা খতিয়ে দেখুক। সেখানে কোনো অন্যায় আছে কি-না, তারা নিজেরাই দেখুক। তাদের এসে দেখা দরকার, কী কী অসামঞ্জস্য আছে।”

সর্বশেষ চিঠিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, “আমরা আপনার (শেখ হাসিনা) ওই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি। (বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের) এই পর্যালোচনা শুধু ১ জানুয়ারি রায় হওয়া শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলা ঘিরে করলেই হবে না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলাটি ঘিরেও করতে হবে।”

চিঠিতে আরো বলা হয়, “এই পর্যালোচনার জন্য একজন জ্যেষ্ঠ আন্তর্জাতিক আইনজীবীর নেতৃত্বে স্বাধীন আইন বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানোর প্রস্তাব দিচ্ছি। আমরা দ্রুতই এটা শুরু করতে চাই। একই সঙ্গে পর্যালোচনা চলাকালে ড. ইউনূস ও তার সহকর্মীদের বিরুদ্ধে কারাদণ্ডের রায় স্থগিত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।”

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply