Tuesday , 7 May 2024
E- mail: news@dainiksakalbela.com/ sakalbela1997@gmail.com
ব্রেকিং নিউজ
ব্যবসাবান্ধব বাজেটে ব্যবসায়ীরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন
--সংগৃহীত ছবি

ব্যবসাবান্ধব বাজেটে ব্যবসায়ীরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন

অনলাইন ডেস্ক:

করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে আগামী অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রস্তাবিত বাজেটে কর্মসংস্থান নিয়ে সমালোচনা হলেও অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তাঁর পরিকল্পনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি স্পষ্টই বলেছেন, নতুন বাজেট ব্যবসাবান্ধব। বাজেটে ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রাখা হয়েছে। ফলে সব সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে তাঁরাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন।

রেওয়াজ অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার দুপুরে বাজেটোত্তর সংবাদ সম্মেলনে এসে অর্থমন্ত্রী বাজেট বাস্তবায়ন, স্বাস্থ্য খাত ও করোনাভাইরাসের টিকা কেনা, কালো টাকা, জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন।

ভার্চুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠিত এই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির, অর্থসচিব আব্দুর রউফ তালুকদার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. এম শামসুল আলম প্রমুখ।

গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত বাজেটে বিরাট ছাড় এসেছে করপোরেট করের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ব্র্যান্ড তৈরির লক্ষ্যে ভারী শিল্পে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পকে উৎসাহ দিতে শুল্ক ও করে নীতি সহায়তা দেওয়া হয়েছে। বাজেটের এসব উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। কিন্তু করোনা সংকটে নতুন করে যাঁরা দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছেন, কাজ হারিয়ে যাঁরা দুর্দশায় পড়েছেন, তাঁদের জন্য বাজেটে ‘স্পষ্ট কিছু’ নেই বলেও সমালোচনা হচ্ছে। এ ছাড়া বাজেট ঘাটতি ও রাজস্ব আদয়ের লক্ষ্য নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা চলছে। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন।

ব্যবসাবান্ধব বাজেট

অর্থমন্ত্রী বলেন, অতীতে ব্যবসায়ীদের প্রতি অনেক অবিচার করা হয়েছে। ব্যবসায়ীদের অবহেলা করে দেশ ও দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। দেশের অর্থনীতির অগ্রগতির ধারা চালু রাখতে হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে হবে। তিনি বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি প্রথমে কিছুটা হোঁচট খেলেও আমরা এটি কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছি। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে আমরা অর্থনীতির ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের অর্থনীতি এখন এগিয়ে চলেছে।’

বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে কী ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘বাজেটে কর্মসংস্থানের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা আছে। বাজেটের পুরোটাই হলো ব্যবসায়ীবান্ধব। বাজেট ব্যবসায়ীবান্ধব হলেই ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেবেন। আর ব্যবসায়ীরা সুযোগ নেওয়ার মানে হচ্ছে উৎপাদনে যাওয়া। সেই উৎপাদনটি ঘটাবে আমাদের দেশের জনগোষ্ঠী। মানুষের কর্মসংস্থান না করা হলে কিভাবে তারা এগুলো করবে? আমরা মনে করি, ব্যবসায়ীরাই এ কাজটি করবেন। সে জন্য ব্যবসায়ীদের আমরা সুযোগ দিয়েছি, আমরা কমিটেড।’

মেড ইন বাংলাদেশ

অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ ট্যাগ লাইনটি ব্যবহার করতে চাই। আমাদের দেশীয় পণ্যে বাড়তি সুযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে বাজেটে যা দেখেছেন সেটাই যে থাকবে, তা নয়। আমরা কিছু ফ্লেক্সিবল থাকব। আমরা আরো পরিবর্তন করব, কখনো বাড়াব না। আমরা সব সময় প্রয়োজনে ট্যাক্স, ভ্যাট কমাব।’

করহার কমানোয় রাজস্ব আদায় বাড়বে

অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে করহার কমানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে রাজস্ব আদায় বাড়বে। তিনি বলেন, ‘মনে-প্রাণে বিশ্বাস করি যদি আমরা আইনটিকে সহজ করতে পারি, করদাতাদের যদি এই কাজে সম্পৃক্ত করতে পারি, তাহলে রাজস্ব অনেক বৃদ্ধি পাবে।’ তিনি আরো বলেন, “যদি আমরা রেভিনিউর হার আস্তে আস্তে কমাই, তাহলে আমাদের কালেকশন বাড়বে। আমরা যে কর কমালাম, আমরা বিশ্বাস করি ‘উই উইল বি উইনার’।”

অপ্রদর্শিত আয়ের সুবিধা বহাল ভেবেচিন্তে

বাজেট বক্তব্যে কালো টাকা নিয়ে কথা না বলা প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘কালো টাকা দুর্নীতির মাধ্যমে সৃষ্টি হয় ও অপ্রদর্শিত আয় সিস্টেম লসের কারণে সৃষ্টি হয়। আমি কালো টাকা নিয়ে কখনো কথা বলিনি। এর পক্ষে এবং বিপক্ষে নানা ধরনের অভিমত রয়েছে। কেউ বলছেন, এ সুযোগ থাকা উচিত নয়, আবার কেউ বলছেন সুযোগ রাখা উচিত। তাই এ মুহূর্তে কিছু বলছি না। আরো কিছু দিন ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত দেব, এ সুযোগ রাখা হবে কি হবে না।’

ঘাটতি বাজেটের সক্ষমতা বেড়েছে

বিশাল আকারের বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আগেই বলেছি যে এখন আমরা ঋণ নিচ্ছি। কিন্তু একটা সময় আমরা ঋণ দেব এবং সেই দিন খুব তাড়াতাড়িই আসবে। আর আজকেই সেই দিন এসেছে বলে আমি মনে করি। ফলে বাজেট ঘাটতি পূরণের সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।’

এ প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, ‘ঘাটতি পূরণে আমরা ধারদেনা করব। আমাদের ধারের বাজার ভালো। ধার পরিশোধের রেকর্ডও ভালো। সবাই আমাদের ধার দিতে চায়। আমরা বিদেশিদের কাছে ধার নিলেও নিয়মিতভাবে পরিশোধ করছি। আমরা ধার নিয়ে খেয়ে ফেলি না, দেশের জন্য কাজে লাগাই।’

অর্থের সংস্থান প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সবাই জানেন টাকা কোথা থেকে আসে, এটা চিরাচরিত প্রথা। বাজেটের অর্থ হয় অভ্যন্তরীণ খাত অথবা বিদেশ থেকে ধার নিতে হবে। এসব ক্ষেত্রে আমাদের সুনাম ভালো, ওভারঅল ভালো করেছি।’ বাজেটে ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়নশীল দেশ, বাজেটে ঘাটতি হবেই। আমরা সবাই একটা অনুমানের জগতে আছি। গত ১০ বছরের বাজেটে ইতিবাচক ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছি। অর্থের কোনো সমস্যা হবে না। কভিডের মধ্যেও মাথাপিছু আয় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে ভালো করছি।’

৭.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব

অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার ৭.২ শতাংশ ধরা হয়েছে। গত বাজেটে ৮.২ শতাংশ ধরা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না। দেশ স্বাভাবিক হলে আবারও বাংলাদেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দেখাব। আমরা এর আগে যা বলেছি তা-ই করেছি, এবারও করে দেখাব। করোনা মহামারির ফলে সারা বিশ্বই ধরাশায়ী হয়ে গেছে। আমাদের অর্থনীতিও বিপর্যস্ত। তবে এই অবস্থায় ৭.২ অর্জন করাটা আমাদের পক্ষে সম্ভব। আমরা যখন যা বলেছি, যা অনুমান করেছি তা-ই হয়েছে। সারা বিশ্ব যখন নিচের দিকে যাচ্ছে, আমরা ওপরের দিকে যাচ্ছি।’

করোনার টিকা কেনার টাকা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না

স্বাস্থ্য খাতে গত বাজেটের চেয়ে এবার ১৩.৩ শতাংশ বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে উল্লেখ করে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আব্দুর রউফ তালুকদার বলেন, বাজেট বরাদ্দের ৬.৩ শতাংশ স্বাস্থ্যের জন্য দেওয়া হয়েছে। এখানে বরাদ্দ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। এক বছরে আমরা যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে পারব তা কেনার জন্য ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এটি প্রয়োজনের চেয়ে বেশি। এর পরও যদি প্রয়োজন হয়, অন্য খাত থেকে টাকা এনে আমরা সরবরাহ করতে পারব।’

এ সময় কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, যেকোনো খাত থেকে টাকা নিয়ে এই খাতে (স্বাস্থ্য) দেওয়া যাবে। অর্থের কোনো সমস্যা নেই। প্রধানমন্ত্রী ও সরকার এ বিষয়ে ‘সর্বোচ্চ গুরুত্ব’ দিচ্ছেন। দেশের অর্থনীতির এখন যা অবস্থা, তাতে মহামারি মোকাবেলায় অর্থ কোনো সমস্যা নয়।

বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী প্রতি মাসে ২৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার কথা বলেছেন। এ হিসাবে দেশের বেশির ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনতে চার বছর লাগবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। এ কাজটি আমরা করব, সে জন্য আমরা প্রস্তুত। কোনো সময় বেঁধে দিয়ে নয়।’

বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য

বাজেট বাস্তবায়নে সফলতার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ বাজেট বাস্তবায়নযোগ্য বাজেট। দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন করা হবে। করোনাকালে দেশের বিশাল জনগোষ্ঠী কাজ হারিয়েছে। অনেক মানুষের সম্পদ খরচ হয়ে গেছে। এমন একটি সংকটময় পরিস্থিতিতে বাজেট উপস্থাপন করেছি। আসুন আমরা সবাই মিলে এই বাজেট বাস্তবায়ন করি।’

About Syed Enamul Huq

Leave a Reply